বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য এবং তাদের আন্দোলন
বাংলাদেশের
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা দেশের ভিত্তি। এ স্তরের শিক্ষার
মান শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে এবং প্রকারান্তরে
জাতীয় উন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব
পালনের মূল কারিগর হলেন
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।
এদের মধ্যে সহকারী শিক্ষকগণ সংখ্যার দিক থেকে সিংহভাগ
এবং সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের কাজটি তারাই করেন। অথচ দীর্ঘকাল ধরে
এই সহকারী শিক্ষকগণ বেতন বৈষম্যের শিকার
এবং এই বৈষম্য নিরসনের
দাবিতে তারা লাগাতার আন্দোলন
করে আসছেন। আজ বাংলাদেশের
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী
শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের স্বরূপ,
এর কারণ, শিক্ষকদের আন্দোলন এবং এর প্রভাব
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করাকরার চেষ্টা করবো।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রেক্ষাপট ও শিক্ষকদের ভূমিকা
বাংলাদেশ
সংবিধানে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক ঘোষণা
করা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রাথমিক শিক্ষকগণ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ২০১০
সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর প্রাথমিক শিক্ষার
ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
২০১৩ সালে একযোগে প্রায়
২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ
একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এই জাতীয়করণ
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষাধিক শিক্ষক সরকারি চাকরির আওতায় আসেন। প্রাথমিক শিক্ষকগণ শুধু পাঠদানই করেন
না, তারা শিক্ষার্থীদের মানসিক
ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা করেন, ঝরে পড়া রোধে
কাজ করেন, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি (যেমন - টিকাদান, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি) বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখেন। সমাজের ভিত্তি তৈরিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
বেতন বৈষম্যের স্বরূপ: কোথায় মূল সমস্যা?
প্রাথমিক
শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের বিষয়টি
মূলত প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের
মধ্যকার বেতন গ্রেড নিয়ে।
বিভিন্ন সময়ে বেতন কমিশন
প্রণীত পে-স্কেলে এই
বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে বা প্রকট আকার
ধারণ করেছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জাতীয়
বেতন স্কেল অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের
মধ্যে বেতনের পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়েছে।
মূল
সমস্যাটি হলো যোগ্যতায় খুব
বেশি পার্থক্য না থাকা সত্ত্বেও
প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড সহকারী
শিক্ষকদের চেয়ে কয়েক ধাপ
উপরে স্থাপন করা হয়েছে। সহকারী
শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে এই বৈষম্য
দূর করে প্রধান শিক্ষকের
পরের গ্রেডে অথবা সমান গ্রেডে
তাদের বেতন নির্ধারণের দাবি
জানিয়ে আসছেন।
আসুন,
২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী
প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের
বর্তমান ও দাবিকৃত গ্রেডের
একটি তুলনামূলক চিত্র দেখি:
সারণী ১: প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেডের তুলনামূলক চিত্র (২০১৫ পে-স্কেল অনুযায়ী)
পদ (Post) |
বর্তমান গ্রেড (Current Grade - ২০১৫ পে-স্কেল) |
দাবিকৃত গ্রেড (Demanded Grade) |
পার্থক্য
(Difference) |
প্রধান শিক্ষক (Head Teacher) |
১০ম গ্রেড (Grade 10) |
(পদোন্নতিপ্রাপ্ত/উচ্চতর গ্রেড) |
|
সহকারী শিক্ষক (Assistant Teacher) |
১৩তম অথবা ১৪তম গ্রেড (Grade 13 or 14
depending on training/appointment date) |
১১তম গ্রেড (Grade 11) অথবা ১০ম গ্রেড (Grade 10) |
৩ থেকে ৪ ধাপের পার্থক্য |
(উল্লেখ্য: প্রধান শিক্ষকদের পদটি আগে সহকারী শিক্ষকদের মতোই ছিল, কিন্তু পরে পদমর্যাদা উন্নত করে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা করা হয় এবং বেতন গ্রেডও উন্নীত হয়। সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবেই রয়ে গেছেন এবং তাদের বেতন গ্রেড আনুপাতিক হারে বাড়েনি)
এই
সারণী থেকে স্পষ্ট যে,
প্রধান শিক্ষকের চেয়ে সহকারী শিক্ষকদের
বেতন গ্রেড ৩ থেকে ৪
ধাপ নিচে। এর ফলে একই
প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও, অনেক
ক্ষেত্রে একই বা কাছাকাছি
যোগ্যতা সম্পন্ন হয়েও সহকারী শিক্ষকগণ
প্রধান শিক্ষকের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ
কম বেতন পান। এটি
তাদের মধ্যে গভীর হতাশা ও
বৈষম্যের অনুভূতি তৈরি করে।
বৈষম্যের পেছনের কারণসমূহ
এই
বেতন বৈষম্যের পেছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান:
১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বিভিন্ন সময়ে বেতন কাঠামো
নির্ধারণে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের
পদকে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে। প্রধান
শিক্ষকের পদকে অফিসিয়াল পদমর্যাদা
ও প্রশাসনিক দায়িত্বের কথা বিবেচনা করে
উচ্চতর গ্রেড দেওয়া হয়েছে।
২. পদমর্যাদার পার্থক্য: প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং সহকারী শিক্ষকদের
তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদিও
শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ প্রায়
একই রকম। এই পদমর্যাদার
পার্থক্য বেতন গ্রেডেও প্রতিফলিত
হয়।
৩. প্রশাসনিক বনাম শিক্ষাদান: প্রধান শিক্ষকদের প্রশাসনিক দায়িত্বে বেশি গুরুত্ব দেওয়া
হয়, যদিও সহকারী শিক্ষকরাই
সরাসরি পাঠদান ও শিক্ষার্থী মূল্যায়নের
মূল কাজটি করেন। কাজের ধরনের এই ভিন্নতাকে বেতন
কাঠামোর পার্থক্যের যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়।
৪. যোগ্যতার মূল্যায়ন: অনেক সহকারী শিক্ষকেরই
এখন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি
রয়েছে, যা অনেক প্রধান
শিক্ষক নিয়োগের সময়ের যোগ্যতার চেয়েও বেশি। কিন্তু এই উচ্চতর যোগ্যতার
প্রতিফলন তাদের বেতন গ্রেডে ঘটেনি।
৫. সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা: প্রায় চার লক্ষ সহকারী
শিক্ষকের বেতন গ্রেড পরিবর্তন
করা সরকারের ওপর একটি বড়
আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে
বলে অনেকে মনে করেন।
সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন: দীর্ঘদিনের সংগ্রাম
বেতন
বৈষম্য নিরসনের দাবিতে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন বহু বছরের পুরোনো।
বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে নতুন বেতন
স্কেল ঘোষণার পর বা নির্বাচনী
ইশতেহারের পূর্বে এই আন্দোলন জোরদার
হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষক সমিতি ও সংগঠন এই
আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রধান দাবিগুলো হলো:
- প্রধান
শিক্ষকের ঠিক পরের গ্রেডে (১১তম গ্রেড) অথবা প্রধান শিক্ষকের সমান গ্রেডে (১০ম গ্রেড) সহকারী শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করা।
- শিক্ষাগত
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেতন গ্রেডের যৌক্তিক সমন্বয় করা।
- সহকারী
শিক্ষক পদকে আপগ্রেড করে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদা দেওয়া।
- সুব্যবস্থিত
পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা।
আন্দোলনের ধরণসমূহ:
- মানববন্ধন
ও বিক্ষোভ সমাবেশ: জাতীয় প্রেসক্লাব, শহীদ মিনার সহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
- স্মারকলিপি
প্রদান: শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
- অবস্থান
কর্মসূচি: দীর্ঘ সময় ধরে অনশন বা অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়, যা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
- ক্লাস
বর্জন/কর্মবিরতির হুমকি: অনেক সময় দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্লাস বর্জন বা কর্মবিরতির হুমকি দেওয়া হয়।
- আলোচনা
ও বৈঠক: সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য ডেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও অনেক সময় কার্যকর সমাধান আসেনি।
শিক্ষকদের
এই আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক
হলো এর ধারাবাহিকতা। বিভিন্ন
সরকারের আমলে আশ্বাস পেলেও
সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় আন্দোলন
বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জাতীয়করণের
পর এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা
আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ এখন তারা
সরাসরি সরকারি কর্মচারী।
বেতন বৈষম্যের প্রভাব
বেতন
বৈষম্যের কুফল বহুমাত্রিক এবং
এটি কেবল শিক্ষকদের নয়,
সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব
ফেলে:
- শিক্ষকদের
মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ: কম বেতন এবং ন্যায্যতার অভাব শিক্ষকদের মধ্যে গভীর হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে এবং কাজে অনুপ্রেরণা কমায়।
- অর্থনৈতিক
সংকট: বর্তমান বেতন দিয়ে শহর বা এমনকি মফস্বলেও মানসম্মত জীবনযাপন করা অনেক শিক্ষকের জন্য কঠিন। এটি তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে সংকট তৈরি করে।
- পেশার
প্রতি অনীহা: আর্থিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষকতার পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হয়। যারা আসেন, তাদের অনেকেই ভালো সুযোগ পেলে পেশা পরিবর্তন করেন।
- শিক্ষার
মানের ওপর প্রভাব: হতাশ ও কম অনুপ্রাণিত শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রতি তাদের সেরাটা দিতে পারেন না। এটি পরোক্ষভাবে প্রাথমিক শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- সামাজিক বৈষম্য: সমাজে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক বৈষম্য স্পষ্ট হয়, যা শিক্ষক সমাজের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।
- আন্দোলন
ও একাডেমিক পরিবেশের ব্যাঘাত: দাবি আদায়ের জন্য বারবার আন্দোলন শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে, যা শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ হয়।
সম্ভাব্য সমাধান এবং করণীয়
প্রাথমিক
শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ
একটি জটিল সমস্যা হলেও
এর সমাধান জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য। কিছু সম্ভাব্য সমাধান
এবং করণীয় নিচে উল্লেখ করা
হলো:
- সরকারের
সদিচ্ছা ও অগ্রাধিকার: শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি পূরণে সরকারের দৃঢ় সদিচ্ছা প্রয়োজন।
- যৌক্তিক
বেতন কাঠামো প্রণয়ন: প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের কাজের ধরণ, যোগ্যতা ও প্রশাসনিক দায়িত্বের সঠিক মূল্যায়ন করে একটি যৌক্তিক ও বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো তৈরি করা।
- ধাপে
ধাপে গ্রেড পরিবর্তন: একবারে সম্ভব না হলে ধাপে ধাপে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করে পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে গ্রেড সমন্বয় করা।
- পদোন্নতির
সুযোগ বৃদ্ধি: সহকারী শিক্ষকদের জন্য যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক বা উচ্চতর পদে পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধি করা।
- অন্যান্য
সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি: বেতনের পাশাপাশি আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, প্রশিক্ষণের সুযোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি করে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
- শিক্ষক
সংগঠনগুলোর
সাথে গঠনমূলক আলোচনা: শিক্ষক সংগঠনগুলোর সাথে নিয়মিত ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজা।
- জনসচেতনতা
বৃদ্ধি: প্রাথমিক শিক্ষকদের গুরুত্ব এবং তাদের সমস্যার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে তাদের আন্দোলন সামাজিক সমর্থন লাভ করে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী
শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য বহু
পুরনো এবং গভীর একটি
সমস্যা। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের
বেতন গ্রেডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, যা শিক্ষকদের মধ্যে
হতাশা ও অসন্তোষের প্রধান
কারণ। এই বৈষম্য দূর
করার দাবিতে শিক্ষকগণ দীর্ঘকাল ধরে আন্দোলন করে
আসছেন। এই বৈষম্য কেবল
শিক্ষকদের ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, সমগ্র প্রাথমিক
শিক্ষা ব্যবস্থার মান এবং জাতীয়
উন্নয়নের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব
ফেলছে। সরকারের উচিত শিক্ষা খাতের
এই গুরুত্বপূর্ণ অংশকে অবহেলা না করে সহকারী
শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে একটি স্থায়ী
ও যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করা। প্রাথমিক
শিক্ষকদের মুখে হাসি ফেরালেই
প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি শক্তিশালী হবে এবং উন্নত
বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সফল
হবে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য (FAQs)
প্রশ্ন
১: প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের মূল দাবি কী? উত্তর: প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের মূল দাবি হলো
প্রধান শিক্ষকদের ঠিক পরের গ্রেডে
(১১তম গ্রেড) অথবা প্রধান শিক্ষকদের
সমান গ্রেডে (১০ম গ্রেড) তাদের
বেতন নির্ধারণ করা এবং বেতন
বৈষম্য দূর করা।
প্রশ্ন
২: কেন এই বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে? উত্তর: প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের
পদের ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়ন, পদমর্যাদার পার্থক্য এবং বিভিন্ন সময়ে
বেতন স্কেল নির্ধারণে যোগ্যতা ও কাজের ধরনের
আনুপাতিক মূল্যায়ন না হওয়ায় এই
বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকদের
পদমর্যাদা ও বেতন গ্রেড
আনুপাতিক হারে বাড়েনি।
প্রশ্ন
৩: সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড কত? উত্তর: ২০১৫ সালের জাতীয়
বেতন স্কেল অনুযায়ী, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড সাধারণত
১৩তম এবং প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী
শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৪তম।
তবে, শিক্ষকদের দাবি হলো এই
গ্রেড অত্যন্ত নিম্নমানের।
প্রশ্ন
৪: আন্দোলনকারীরা কী ধরনের কর্মসূচি পালন করেন? উত্তর: সহকারী শিক্ষকগণ তাদের দাবি আদায়ের জন্য
মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদান, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন এবং ক্ষেত্রবিশেষে
ক্লাস বর্জন বা কর্মবিরতির হুমকি
দিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন
৫: এই বৈষম্য প্রাথমিক শিক্ষার ওপর কী প্রভাব ফেলে? উত্তর: বেতন বৈষম্যের কারণে
শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ বাড়ে,
যা তাদের কাজে অনুপ্রেরণা কমায়।
মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা
এই পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হন
এবং যারা আসেন, তারাও
ভালো সুযোগ পেলে পেশা পরিবর্তন
করেন। এটি সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক
শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব
ফেলে।
প্রশ্ন
৬: সরকার কি এই সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? উত্তর: বিভিন্ন সময়ে সরকার শিক্ষক
নেতাদের সাথে আলোচনা করেছে
এবং সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। বেতন বৈষম্য নিরসনে
কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত সমস্যাটির
একটি স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান
হয়নি, যার ফলে আন্দোলন
অব্যাহত রয়েছে।