জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পুনর্বহালের দাবি সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এই দাবির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং শিক্ষার্থীদের মতাদর্শিক অবস্থান।
ঘটনার পটভূমি
- শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তনের দাবি ওঠে।
- ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা চারটি আবাসিক হলের নামফলক মুছে দেন এবং নতুন নামকরণের দাবি জানান।
- এরপর ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শেখ রাসেল হল, শেখ হাসিনা হল, এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল—এই চারটি হলের নাম বাতিল করা হয়
স্মারকলিপির দাবি
- জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের একাংশ উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পুনর্বহালের দাবি জানায়।
- স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন একই মুক্তির বোধ থেকে উৎসারিত। তাই বঙ্গবন্ধুর নাম বাতিল করা মানে সেই মুক্তির বোধকে অস্বীকার করা।
- তারা এটিকে “স্বৈরাচারী রেজিমের মনোবৃত্তি” বলে অভিহিত করে এবং দাবি করে, এই অপচেষ্টা পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে যাবে
শিক্ষার্থীদের
প্রতিক্রিয়া
পক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা
- জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের একাংশ মনে করে, বঙ্গবন্ধুর নাম বাতিল করা মানে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অস্বীকার করা।
- তারা বলছে, ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান—এই দুটি আন্দোলন একই মুক্তির বোধ থেকে উৎসারিত। তাই বঙ্গবন্ধুর নাম বাতিল করা মানে সেই ঐক্যবদ্ধ মুক্তির চেতনায় আঘাত করা
- তারা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে হলের নাম পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে এবং এটিকে “স্বৈরাচারী রেজিমের মনোবৃত্তি” বলে অভিহিত করেছে
বিপক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা
- জুলাই আন্দোলনের সময় অনেক শিক্ষার্থী শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তনের দাবি তোলেন।
- ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তারা চারটি হলের নামফলক মুছে দেন এবং নতুন নামকরণের দাবি জানান।
- এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় চারটি হলের নাম বাতিল করে সংখ্যার ভিত্তিতে নতুন নাম দেয় (যেমন: বঙ্গবন্ধু হল → ৬ নম্বর ছাত্র হল)
এই বিতর্কে শিক্ষার্থীরা মূলত দুইটি মতাদর্শে
বিভক্ত—একদল ঐতিহাসিক চেতনা
ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নাম পুনর্বহালের
পক্ষে, অন্যদল রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ও নতুন আন্দোলনের
চেতনায় নাম পরিবর্তনের পক্ষে।
জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
হলের নাম পুনর্বহাল নিয়ে
শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া এখনো সরাসরি ও
বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়নি, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক
মোহাম্মদ কামরুল আহসান এ বিষয়ে কিছু
মন্তব্য করেছেন।
উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া
- উপাচার্য স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন, বিষয়টি তিনি বিবেচনায় নিচ্ছেন
- তিনি এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেননি, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশীজনদের (শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী) কাছ থেকে নাম প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে
শিক্ষকদের অবস্থান (পরোক্ষভাবে)
- যদিও সরাসরি কোনো শিক্ষক মন্তব্য করেননি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধিরা থাকেন। ১৭ মার্চের সিন্ডিকেট সভায় চারটি হলের নাম বাতিলের সিদ্ধান্তে তারা অংশ নিয়েছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে নাম পরিবর্তনের পক্ষে কিছু শিক্ষকও রয়েছেন।
- অন্যদিকে, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কিছু শিক্ষকও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নাম পুনর্বহালের পক্ষে থাকতে পারেন।