ভূমিকা
মানুষের চারপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়ে তার পরিবেশ। পরিবেশের সাথে মিলে-মিশে মানুষ বা অপরাপর প্রাণীর জীবনের বিকাশ ঘটে। তারা নিজ নিজ উপকরণ থেকেই প্রয়োজনীয় অংশ ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত অংশ ফিরে যায় সে পরিবেশে। সেখান থেকে তা আবার মানুষ গ্রহণ করে। এভাবে জীবজগৎ ও তার পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকার উপকরণের আদান-প্রদান চলে। আদান-প্রদান ভারসাম্যের উপর জীবের অস্তিত্ব নির্ভশীল। এ ভারসাম্য বিঘিœত হলে তাকে বলা হয় পরিবশে দূষণ।
পরিবেশ দূষণের শুরু
মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের শুরু। মানুষ শিখল আগুন জ্বালাতে, বন কেটে করল বসত। সেই সাথে সভ্যতার বিচিত্র বিকাশের প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশ হতে থাকল দূষিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে শুরু হল নতুন যুগের নতুন সভ্যতার। শুরু হল নগর জীবনের, গড়ে ওঠল অসংখ্য কারখানা, যানবাহনের প্রাচুর্য দেখা দিল পথে পথে। সবুজ বিপ্লব ঘটাতে এল কীটনাশক। আণবিক ও পারমাণবিক বোমার তৈজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে গেল আকাশে বাতাসে। ফলে পরিবেশ দূষণ দেখা দিল ব্যাপকভাবে।
দূষণের প্রতিক্রিয়া
মানুষ যেসব জিনিস করে তৈরি করে তার পরিত্যক্ত বিষাক্ত পদার্থই দূষণের সৃষ্টি করে। বাতাস, পানি ও শব্দ-এ তিন শ্রেণিতে দূষণকে ভাগ করা চলে। বাতাসে জীবনের অস্তিত্বের ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা বেশি হলে তাকে বলে বায়ু দূষণ। ধোঁয়া, ধুলা-বালি, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয়পদার্থ প্রভূতি বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। তেলের দহনজাত ধোঁয়া থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড, যানবাহরেন ধোঁয়া, ঘরবাড়ি নষ্ট করে, ধুলো রোগবাহক। কীটনাশক হরমোনের ভারসাম্য বিনষ্ট করে। আণবিক ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যান্সার রোগের কারণ। তা থেকে অঙ্গবিকৃতিও হতে পারে।
পরিবেশ দূষণের ফল
পরিবেশ দূষণের জন্য ঝড়, বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি প্রভূতি হচ্ছে। গাছপালার সঙ্গে বৃষ্টির একটা প্রাকৃতিক যোগসুত্র রয়েছে। কাজেই গাছপালা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত কমে এসেছে। খরা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ফসল পুড়ে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাব। পানির স্তর ধীরে ধীরে নিচে চরে যাচ্ছে। মাটি রসহীন হয়ে পড়ছে। পানীয় জলে অভাব ঘটছে। প্রকৃতির মধ্যে বিপর্যয় নেমে আসছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জীবজন্তু ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার আবশ্যক।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
পরিবেশ দূষণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি, রোগ-শোক, অর্থ ও সম্পদের অপচয় ইত্যাদি যে সব ক্ষতি সাধিত হয় তা থেকে মানুষকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার পথ বের করতে হবে। এর জন্যে নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিকরা আজ সারা বিশ্বের মানুষকে এ পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সর্তক করেছেন। পরিবেশ দূষণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল তার প্রেক্ষিতে দূষণ রোধ করার প্রচেষ্টা চলে। বিভিন্ন দেশে দূষণ নিরোধন আইন হয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে দূষণ বন্ধ করার চুক্তি সম্পাদি হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এর মোকাবিলার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি বছর ৫জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয় । আমাদের দেশেও এ ব্যাপারে সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।
উপসংহার
পরিবেশ দূষণ মানব জাতির জন্য এক মারাত্বক হুমকিস্বরুপ। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের মানুষের সচেতনতা দরকার। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরও প্রকট। তবে জাতির স্বার্থেই তার মোকাবেলা প্রয়োজন।







